পার্কার

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১.৫১০১১ মিটার (১৫ কোটি কি.মি.), সোলার ধ্রæবক ১.৩৮১০২৬ ওয়াট/বর্গমিটার, সূর্যের মোট উজ্জ্বলতা (লুমিনোসিটি) ৩.৯১০২৬ ওয়াট। এটি মোট ভরের ওপর নির্ভরশীল। সূর্য প্রতিবর্গ মিটারে শক্তি বিকিরণ করে ৬.৪১১০৭ ওয়াট, পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা ৫৮০০ কেলভিন, কেন্দ্রীয় তাপমাত্রা ১০৭ কেলভিন। গড় ঘনত্ব ১০৫ কেজি/ঘনমিটার কেন্দ্রীয় চাপ ২১০১৬ প্যাসকল, সূর্যে প্রতি ১১ বছর পর পর কালো দাগ দেখা যায়। পুরো সৌরজগতের প্রায় ৯৯.৮% ভর নিয়ে সূর্য গঠিত। সূর্য আপন গ্যালাক্সির চার দিকে ২০ কোটি বৎসরে একবার পরিভ্রমণ করে। এতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ ৫৫% এবং হিলিয়াম ৪৪% অন্যান্য ১%। সূর্যের ব্যাস ১৩,৩২,০০০ কি.মি., ঘূর্ণন কাল ২৫ দিন, ভর ১.৯৯১০৩০ কেজি।
সূর্য প্রায় ৬০ প্রকার উপদান দিয়ে তৈরী। এ সবের মধ্যে আছে সোনা, রূপা, তামা, লোহা, রেডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এ্যালুমিনিয়াম, ইউরেনিয়াম, সীসা ইত্যাদি ধাতু এবং হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। সূর্য সৌরজগতে এ স্পেকটাল বিশিষ্ট মাঝামাঝি মানের একটি নক্ষত্র যার আয়ুকাল ১,০০০ (এক হাজার) কোটি বছর। এখন থেকে ৪৫০ (চারশত পঞ্চাশ) কোটি বছর আগে সূর্যে জন্ম হয়ে ছিল। অর্থাৎ সূর্য আরো ৫৫০ (পাঁচশত পঞ্চাশ) কোটি আলোক শক্তি বিকিরণ করে যাবে। আমাদের সূর্য বিষমাকৃতির এক প্লাজমা পিন্ড। পৃথিবীর মত সূর্যকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো, সূর্যের কেন্দ্র বা কোর। সূর্যের ব্যাসার্ধের প্রায় ২০% জুড়ে আছে কোর।

গ্রহ, উপগ্রহ, এমন কি ধুমকেতু অভিমুখে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের কথা শুনেছি, কিন্তু এবার মহাকাশযান উৎক্ষেপিত হতে যাচ্ছে সূর্যের অভ্যন্তরে যার নাম পার্কার। পার্কার তথ্য দিবে সূর্যের গঠন ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে। পার্কার সূর্যের উচ্চ তাপমাত্রাকে উপেক্ষা করে সূর্যের ভেতর প্রবেশ করবে যা হবে বিজ্ঞানীদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।
আমাদের সৌর জগতের ৯০.৬% ভর সূর্যতে আছে যেটি আমাদের সকল শক্তির উৎস। তাই এটি সমন্ধে আমাদের ভালভাবে জানা দরকার, তবে জানাটা খুব শক্ত।এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য নাসা ২০১৮ সালের জুন মাসে সূর্যের ভেতরে মহাকাশযান পার্কারকে উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে যা ১০ দশক ধরে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।যদিও এটি ২০২৪ সালে সূর্যের চারিদিকে ঘুরা শুরু করবে। পার্কার সূর্যের চারিিদকে মোট ২৪ বার ঘুরবে। এ মিশনের জন্য নাসার ব্যয় হবে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। পার্কারের আকৃতি হবে একটি ছোট গাড়ীর মত যা সূর্য থেকে প্রায় ৪ মিলিয়ন মাইল(৪০ লক্ষ মাইল) থেকে অর্থাৎ বুধের আরো কাছ থেকে ঘুরবে। এ মিশনের মূল উদ্দেশ্য হবে সূর্যের করোনা থেকে কি পরিমাণ তাপ শক্তি বের হচ্ছে এবং সৌর ঝড় থেকে যে পরিমাণ ইলেক্ট্রণ শক্তি কণা বের হয়ে বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছে। পার্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪.৫ ইঞ্চি কার্রন কম্পোজিটের আবরণ যা ২৫০০০ ফারেনহাইট সৌর তাপ থেকে সূর্যের চেীম্বক শক্তি, প্লাজমা,শক্তিধর কণা, সেীরঝড়ের ছবি সংগ্রহের যন্ত্রগুলি রক্ষা করে কর্মক্ষম রাখবে ১৩০০ ডিগ্রী সে: তাপমাত্রায়। পার্কার সূর্যের চেীম্বক শক্তির ধর্ম, প্লাজমা,শক্তিধর কণা, সৌরঝড়ের ঘূর্ণায়নের প্যাটার্ণ জানার চেষ্টা করবে। পার্কার সূর্যের কাছাকাছি পৌছতে ঘন্টায় ৪৩০০০০ মাইল (চার লক্ষ ত্রিশ হাজার মাইল) বেগে চলবে। এ ধরনের বেগে চললে পার্কার ওয়াশিংটন ডিসি থেকে টোকিও পেীঁছিতে সময় নেবে মাত্র ১ মিনিট । যে সূর্যের কোরনা থেকে প্রতি মিনিটে ২৫ কোটি টন শক্তি ধ্বংস হচ্ছে, যার পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১০ হাজার ডিগ্রী ফারেনহাইট বেশী, যেখানে অনররত নিউক্লিয়ার ফিউসান বিক্রিয়ায় তেজষ্ক্রিয় কণা বের হচ্ছে, যেটি আর ৩/৪ বিলিয়ন বছর বাঁচবে, পার্কার সেই সূর্য থেকে প্রচুর তথ্য পাঠাক, সেীরঝড়ের ঘূর্ণায়নের প্যাটার্ণ জানার পর সেীর ঝড় থেকে পৃথিবী রক্ষা পাক এ কামনা করি।
ড. মো: মনসুর আলী
লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক